শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫

তারেক রহমান: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনির্দিষ্ট সমর্থন যৌক্তিক নয়

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে। তবে জনগণ এখন মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সেই সমর্থন অব্যাহত রাখা আর যৌক্তিক নয়।”

বৃহস্পতিবার (১ মে ২০২৫) মহান মে দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, “পলাতক স্বৈরাচার আর যেন ফিরে না আসে—সেই লক্ষ্যেই জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। এর জন্য দরকার দ্বিমুখী পদক্ষেপ—সংস্কার ও নির্বাচন। সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি, কারণ একটি গোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে।”

তিনি বলেন, “জনগণের মনে এ বিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে যে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সুবিধা দিতে পারে। তাই আমাদের প্রস্তাব—স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়ন করুন। বিশ্বাস করি, কোনো রাজনৈতিক দলেরই এর বিরোধিতা করার অবকাশ নেই।”

তিনি আরও বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে উপযুক্ত করে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করুন। পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দিন—যাতে জনগণ নিশ্চিত হতে পারে, দেশ কোন পথে এগোচ্ছে।”

রমজানে নিত্যপণ্যের দামে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও ঈদের পর হঠাৎ চাল ও তেলের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “আয় না বাড়লেও খরচ বাড়ছে। জনগণ তাদের কষ্টের কথা কোথায় বলবে?”

রাখাইনে মিয়ানমারের চলমান সংঘাতে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “দেশের সার্বভৌমত্ব-সম্পর্কিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন নয়। আমরা এ নিয়ে বিতর্ক চাই না, তবে মনে করি—সিদ্ধান্ত আসা উচিত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাত দিয়ে।”

তার বক্তব্যে ছিল একটি সরল বার্তা: “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—বিদেশি স্বার্থ নয়, দেশের জনগণের স্বার্থই হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারত, মিয়ানমার বা অন্য কোনো দেশের নয়—প্রথমে বাংলাদেশ।”

সমাবেশটি শুরু হয় দুপুর ২টায়, তবে সকাল ১২টা থেকেই রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জমা হন হাজারো নেতাকর্মী। রঙিন টুপি, ব্যানার, ঢোল ও টি-শার্টে তারা তৈরি করেন উৎসবমুখর পরিবেশ।

সমাবেশ শুরুর আগে জাসাসের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। কনকচাঁপা, মৌসুমীসহ একাধিক শিল্পী এতে অংশ নেন।

সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন। বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।

সমাবেশের শেষাংশে শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থানে।

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ